১৮ মার্চ মারা গেছেন ব্যান্ড তারকা খালিদ। গায়কের শেষ সময়ে স্ত্রী-সন্তান দেশে ছিলেন না। মৃত্যুর পর ছেলে আরিক নিউইয়র্ক থেকে একটি ভিডিওবার্তায় কথা বলেছেন। ভাবলেশহীন ও সানগ্লাস পরে ভিডিওবার্তায় কথা বলায় অনেকেই বিষয়টি নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন। করেছেন সমালোচনা। এবার এসব বিষয়ে জবাব দিয়েছেন খালিদের স্ত্রী শামীমা জামান।
গতকাল (১৯ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এই ছেলে ১২ বছর বয়স থেকে নামাজ পড়ে, মাশাল্লাহ এই ছেলের গানের গলা থাকা সত্ত্বেও গান না শিখে কোরআন শিখেছে। এই ছেলে বাবাকে নামাজ পড়তে বলতে বলতে হতাশ হয়েছে। এই ছেলে তার অসুস্থ মায়ের সেবা করেছে ৭ মাস রাত ৪টা পর্যন্ত বায়েজিদ বোস্তামির মতো দাঁড়িয়ে থেকে। এই ছেলে তার মায়ের মৃত্যুর অপেক্ষায় একা একটি বাসায় কাটিয়েছে।’
তুলে ধরেছেন আরিকের লাইফস্টাইলও। তিনি আরও বলেন, ‘এই ছেলে তার আল্লাহর হুকুম পালন করতে আমেরিকান মেয়েদের আহবান সত্ত্বেও একটা প্রেম করেনি। এই ছেলে তেমন বন্ধু হয় না যখন সে দেখে বন্ধুগুলো গাজা খায়। এই ছেলে প্রতিটি কাজে আগে আল্লাহর বিধান কী জেনে নেয়, আমেরিকার স্কুলের হারাম চিকেন দেখলে না খেয়ে থাকে, তবু হারাম পেটে দেয় না। এই ছেলেকে তার বাবার টাকা দিতে হয় না, তার মা তার জন্য যথেষ্ট উপার্জন করে। তার বাবার চিন্তা এই ছেলেকে নিয়ে নয় যতটা, তার গান আর ভক্ত শিষ্যদের নিয়ে। তাই খুব খেয়াল করে আমার ছেলেকে নিয়ে না জেনে একটা খারাপ কথা উচ্চারণ করলে ওপর আল্লাহ তার বিচার করবেন।’
খালিদের মৃত্যুর বিষয়টি ছেলে বুঝে উঠতেই পারেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ও স্কুল থেকে এসে বুঝতেও পারছে না আসলে কী ঘটে গেছে, ও স্মার্ট তো হঠাৎ করে খ্যাত হয়ে কীভাবে কথা বলবে? যতসব। আর সানগ্লাস? উন্নত দেশে কান্না লুকাতেও সানগ্লাস পরে মানুষ। শুধু সাংবাদিক তানভীর তারেকের অনুরোধে ও এই কথাগুলো বলতে রাজি হয়েছে। বড়দের সম্মান করে বলে নয়তো মিডিয়ায় কথা বলতে বা কাজ করতে ও পছন্দ করে না।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন খালিদ। রাজধানীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
খালিদ ‘সরলতার প্রতিমা’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘তুমি নেই তাই’–এর মতো বহু জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।
১৯৮৭ সালে সারগাম থেকে প্রকাশিত ‘চাইম’ এর প্রথম অ্যালবাম (সেলফ টাইটেলড) দিয়ে যাত্রা শুরু তাঁর। চাইমের ব্যান্ড অ্যালবামের চেয়ে খালিদ জনপ্রিয় হয়ে যান ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম দিয়ে। মূলত খালিদ তাঁর জনপ্রিয়তা ধরে রাখেন ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম দিয়েই।
বাংলা ব্যান্ড সংগীতের আরেক তারকা প্রিন্স মাহমুদের ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবামগুলোতে খালিদ তাঁর গান দিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। প্রিন্স মাহমুদের অ্যালবামগুলোর মধ্যে খালিদের গাওয়া ‘কিভাবে কাঁদাবে’, ‘আবার দেখা হবে’, ‘নীরা’, ‘আকাশনীলা’, ‘কোন কারণেই’, ‘হয়নি যাবার বেলা’ শ্রোতা মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।