PeopleNTech Business Hosting
ডিসি একুশে অ্যালায়েন্সের আয়োজনে ভার্জিনিয়ায় উদযাপিত হলো অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

ডিসি একুশে অ্যালায়েন্সের আয়োজনে ভার্জিনিয়ায় উদযাপিত হলো অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।


upload news

আরও একটি মিলনমেলা। গত ১৩ বছর ধরে এভাবেই হয়ে আসছে। বছর জুড়ে সবাই যেন অপেক্ষায় থাকে এই একটি দিনের। ফুলের তোড়া হাতে শনিবার বিকেল দলে দলে এভাবে জড়ো হতে থাকে আর্লিংটনের কেনমোড় মিডল স্কুলে। উদ্দেশ্য সবাই মিলে মানবজাতির জন্য বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে শ্রদ্ধাভরে উদযাপন করা। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, মেরিল্যান্ড ও ভার্জিনিয়ার বাংঙ্গালী কমিউনিটির ২৫টি সংগঠনের মিলিত এক নাম ডিসি একুশে অ্যালায়েন্স। এদের মধ্য থেকে প্রতিবছর যে কোন একটি সংগঠন প্রতিবছর সব বাঙালী হৃদয়কে এক মঞ্চে এক করার দায়িত্বটি পালন করে থাকে। এবার ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই ফোরাম ডুয়াফি পেয়েছিলো সে দায়িত্ব। তাদের ব্যাবস্থাপনায় এবং আর্লিংটন আর্টস ও আর্টিলিংটন কাউন্টির সহযোগিতায় হয়ে গেলো পরিপূর্ণ এক আয়োজন। 

শনিবার বিকেল সাড়ে পাচটায় নির্ধারিত সময়ের আগে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুল আনুষ্ঠানিকতা। 

এরপর সবাই মিলে গাইলেন একুশের প্রথম প্রহবের প্রভাতফেরীর সেই গান-আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি। শুধু গানই নয় ফাকে ফাকে চলতে থাকে মহান একুশ নিয়ে অসাধারণ সব কবিতার আবৃত্তি। 'রক্তে প্রলয় দোলা' শিরোনামে শিল্পীরা গান গাইলেন সালাম সালাম হাজার সালাম সকল শহীদ স্মরণে। মৃত্যুঞ্জয়ী শিরোনামে ছিলো আবৃত্তি জানেন দাদা আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না। 

এই পর্ব শেষে মঞ্চে উঠে আসেন এই আয়োজনকে সফল করে তোলা ২৫টি সংগঠনের কর্তব্যাক্তিরা। যেখানে সবার মাঝে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটন ইউনির্ভাসিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও পিপলএনটেকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। আয়োজনের পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানানো হয়। 

পরের পর্বটি ছিলো অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষনীয় অংশ। আমেরিকার মাটিতে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠা শিশুরা গাইলো আমি একবার দেখি বারবার দেখি বাংলার মুখ। পুরো অডিটোরিয়ামে শুনশান নিরবতা। সবাই গাইলেন তাদের সাথে। তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করলো উপস্থিত সকলে। কারণে এই শিশুরা এই বিদেশী সংস্কৃতি পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েও বাংলা ভাষাটাকে যেভাবে লালন করছে তা সত্যিই এক মুগ্ধতার বিষয়।  

অডিটোরিয়ামের বাইরে ঠিক তখনই চলছিলো শিশু কিশোরদের নিয়ে আরেকটি ইভেন্ট, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগী। তিনটি গ্রুপের পঞ্চাশ জনের মতো প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন সেখানে। প্রতিযোগীতা শেষে তাদের চর্চাা আর প্রতিভা দেখে মুগ্ধ বিচারকরা। মুগ্ধ করেছেন একুশ নিয়ে লেখার প্রতিযোগিরাও। দুই বিভাগের সেরাদের পুরস্কৃত করা হয় মঞ্চে। 

কিংবদন্তী নৃত্যশীল্পী লায়লা হাসানের দল পরিবেশন করে নৃত্যনাট্য 'একুশ আমার অহঙ্কার'। 

ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস ও মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখেন আয়োজনের প্রধান অতিথী যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমরান হোসেন। তিনি বলেন ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে আত্মদানের গৌরবোজ্জল ঘটনা ঘটেছিলো তা সারা বিশ্বে বিরল। মাতৃভাষার জন্য জীবনদানের মাধ্যমে আমাদের ভাষা শহীদরা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব নজির সৃষ্টি করেছিলেন। 

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে এরপর মঞ্চে উঠে একসাথে কথা বলেন আরলিংটন কাউন্টি বোর্ডের চেয়ার ক্রিস্টিয়ান ডরসি, আরলিংটন বোর্ড মেম্বার কে টি ক্রিস্টাল এবং টাকিস কেরানটোনিস, ইউ এস সিনেটর মার্ক ওয়ার্নারের অফিসের রিজিওনাল ডিরেক্টর টানিয়া টেলেন্টো। তারা বলেন, বাঙালি জাতিকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে অমর একুশের রয়েছে অসামান্য অবদান। একুশের চেতনায় উজ্জীবিত আজ সারাবিশ্ব। একুশ একটি চেতনা, বৈশ্বিক প্রতীক ও একটি মহান বিপ্লবের নাম। ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে বাঙালির জীবন উৎসর্গের ঘটনা বিশ্বের বুকে এক অনন্য ইতিহাস। রাষ্ট্রদূত মো: ইমরানের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী মিনারে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সবাই।  

আয়োজনের পরের অংশে ছিলো একটি নাটিকা। নতুন সংস্কৃতি কি করে বাংলা ভাষাকে তার গৌরবের স্থান থেকে সরিয়ে দিয়েছে তারই প্রেক্ষাপটে বিবেকের জাগরণ ও চেতনাবোধের পুনর্বিকাশকে ফুটিয়ে তোলা হয় নাটকে । নাটকের রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন শফিকুল ইসলাম। 

এবারেও ছিলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অন্য দেশের সদস্যদের পরিবেশনা। ভারতীয় গ্রুপ তা থৈ এর পরিবেশন করে- দুই মায়ের সন্তান। আরও বলিভিয়ান গ্রুপ ফার্দিনান্দ কালচারাল পাচামামা গ্রুপের উপস্থাপনায় ছিলো টিঙ্কু ২০২৩ নামে একটি গীতিনাট্য।

আর সবশেষে ছিলো অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের মূল অংশ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। ২৫টি সংগঠনের সবাই অস্থায়ী শহিদ মিনারের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ব্যাক্তিগতভাবেও অনেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্পিকারে বাজতে থাকা সেই অমর কথামালায় অমর গানখানি, সাথে ফুল হাতে থাকা মানুষগুলোও গাইতে থাকেন ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। 

আমেরিকা থেকে আফ্রিকা এবং ইউরোপ থেকে এশিয়া প্রতিটি দেশে, প্রতিটি রাজধানী ও শহরে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালি জাতির জয়গান গাওয়া হচ্ছে। বাঙালি জাতির ২১শে ফেব্রুয়ারির সুমহান গৌরবে গৌরবান্বিত হয়ে উঠেন এই আয়োজনে আসা প্রতিটি মানুষ। 

বাঙালি জাতির সংগ্রাম ও বিজয়ের কথা শিশু-কিশোরদের পৌছে দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাবা মারা। আর প্রতি বছর এমন আয়োজনের মাধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ২১শে ফেব্রুয়ারির আত্মদানের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আরও উজ্জীবিত করবে এমনটা এ প্রজন্মের বিশ্বাস।  

আর বিদেশের মাটিতে এমন সব আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারবে এখান থেকে হাজার হাজার মাইল দূর এশিয়ার একটি ছোট্ট দেশ বাংলাদেশের মানুষ আজ থেকে ৬৭ বছর আগে সারা বিশ্ববাসীর মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য হাসিমুখে জীবন দিয়েছেন। এ সত্যি এক অন্যরকম অনুভূতি। বিষন ভালো লাগার, গৌরবের।

সর্বশেষ



G-Suite Email by Google Cloud

Ads


সংবাদ


Ads