প্রকাশ: ১০ মে ২০২২ , ০০:৫৪ | Mamun Rahman (MR)
একটি 'মা দিবস' গেলো রবিবার। এবছর দিবসটি উদযাপন হলো ৮ মে, মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। মা দিবস বিশ্বের সকল মায়ের জন্য একটি বিশেষ দিন।
মায়ের অবদান মানুষের জীবনে ঠিক কতটা তা বোঝানো যায় না। কিন্তু এই মায়ের অবদানটাই ঠিক যেনো আমাদের চোখে পড়ে না। এই দিনটিকে প্রতিটি সন্তানের জন্য মায়ের সেই অমূল্য, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কথা স্বীকার করে নেওয়ার দিন হিসেবেই বিশ্বে পালন করা হয়। আর এই দিনটি সেই অবদানের জন্য মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো ধন্যবাদ জানানোরও দিন।
মানবকূলে সকল সম্পর্কের সেরা সম্পর্কটিই হচ্ছে মা ও তার সন্তানের সম্পর্ক। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা আর কিছুর সঙ্গেই তুল্য নয়।
একটি শিশু জন্ম নেওয়ার পর থেকে মা তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে শিশুর নিরাপত্তা ও ভালো থাকা নিশ্চিত করতে আত্মনিয়োজন করেন। আর এই মায়ের হাতেই গড়ে ওঠে সন্তানের জীবন। জীবনের সকল দুঃখ সঙ্কট থেকে সন্তানকে মুক্ত রাখতে মা থাকেন বদ্ধপরিকর। আর মায়ের সেই সব অবদানের কথা স্বীকার করতে এবং তারই উদযাপন করতে এই মা দিবস।
বিশ্বের দেশে দেশেই এই মা দিবস উদযাপন হয়। তবে বিশ্বের সব দেশে দিবসটি একই দিনে নয়। অনেক দেশে দিনটি উদযাপন হয় মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। সেই হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র দিনটি উদযাপন হয়ে গেলো গতকাল ৮ মে। বাংলাদেশেও তাই।
কীভাবে এলো মা দিবস
সেটি ১৯০৭ সালের কথা। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী, নাম আনা জারভিস, সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি তার মায়ের স্মরণে মাদার'স ডে পালন করবেন। তার দুই বছর আগে মাকে হারিয়েছিলেন আনা। সেখান থেকে শুরু। এরপর অনেকেই এই দিনটি পালন শুরু করে। আর ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।
তবে বিশ্বের অনেক দেশে সভ্যতায় মাতৃত্বের বন্দনা ও উদযাপনের রেওয়াজ আরও পুরোনা। কোথাও কোথাও এর রয়েছে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। যেমন গ্রিক সভ্যতায় রোমান ফেস্টিভাল অব হিলারিয়া, ক্রিশ্চিয়ান মাদারিং সানডে সেলিব্রেশন এসব উৎসবকেও মা দিবসের সাথে মিলিয়ে নেয় অনেক দেশ। যেমন যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯০৭ সালে আনা জারভিস তার মায়ের জন্য ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্র্যাফটনে এন্ড্রুস মেথোডিস্ট এপিসকোপ্যাল চার্চে প্রার্থণাসভার আয়োজন করেন। পরে আনা একটি মাদার'স ডে ওয়ার্ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হতো। পরে আনা জারভিস দিবসটি 'মাদার'স ডে ফর পিস' হিসেবে নামকরণের দাবি তোলেন, যে দিনটিতে মায়েরা এই দাবি নিয়ে সামনে আসবেন যেনো তাদের স্বামী ও সন্তানদের আর যুদ্ধে প্রাণ দিতে না হয়। এই আন্দোলনে জেরভিসের সঙ্গে ছিলেন জুলিয়া ওয়ার্ড হোয়ি নামে এক পিস অ্যাক্টিভিস্ট। দিনটিকে তারা সকল মায়ের সম্মানে নিবেদিত করতে চেয়েছিলেন। কারণ তারা বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে কারো জন্য তার মায়ের চেয়ে বেশি অবদান কেউ রাখতে পারে না।
১৯০৮ সালেই দিবসটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে চেয়ে কংগ্রেসে প্রস্তাব ওঠে, কিন্তু তা নাকচ হয়ে যায়। আর এ সময় কংগ্রেসম্যানরা এই কৌতুক করতেও ছাড়েন না যে, এটা করা হলে এক সময় তাদের মাদার-ইন-ল'জ ডে (শাশুড়ি দিবস) ও করতে হবে। কিন্তু হাল ছাড়েননি আনা জারভিস। ১৯১১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলো দিনটিকে মাদার'স ডে হিসেবে পালন করতে শুরু করে। আর ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মায়েদের সম্মানে দিনটিকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে দেওয়া ঘোষণাপত্রে সই করেন।
আনা জারভিসের ইচ্ছা ছিলো স্রেফ দিনটিতে মায়ের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা জানানো, তার অবদানকে স্বীকার করে নেওয়ার । কিন্তু ১৯২০ এর দশকের গোড়ার দিকেই হলমার্ক কার্ডস বাজারে নিয়ে এলো মাদার'স ডে কার্ড। সেই শুরু। কোম্পানিগুলো দিনটিকে তাদের বাণিজ্যের সুযোগ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে লাগলো। বিষয়টি আনা জারভিস ভালোভাবে নেননি। জীবদ্দশায় বিভিন্ন সময়ে তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি এতটাই প্রতিবাদী ছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেফতারও হতে হয় এ জন্য।
বাণিজ্যিকীকরণের পরেও বিশ্বের দেশে দেশ দিনটি উদযাপন করা হয় অতি আন্তরিকতায়। বাংলাদেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে উদযাপন হয় মা দিবস। সবাইকে মা দিবসের শুভেচ্ছা।