অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস এই পরিকল্পনা করেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার খরচে একটি ড্যাটা সেন্টার বসাবে। স্টেটের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি হচ্ছে, এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর গ্লেন ইয়াংকিন।
কয়েক মিলিয়ন ডলারের প্রণোদনায় এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে।
এখনো অবশ্য আইনপ্রণেতাদের অনুমোদন বাকি। তবে সবশেষ অধিবেশনে দুই দলের নেতারাই ইয়াংকিনের কার্যালয় থেকে জারি করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়ে দিয়েছেন।
ড্যাটা সেন্টার প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্ক চলমান। বিশেষ করে উত্তর ভার্জিনিয়ায় অব্যহতভাবে অবকাঠামো নির্মাণে প্রতিবেশিরা সোচ্চার রয়েছেন। পরিবেশ নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ্য।
আধুনিক ইন্টারনেটের ব্যবহারে প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ও কম্পিউটার সার্ভারের জন্য এই ড্যাটাসেন্টারগুলো ব্যবহার করা হয়। আর এ চাহিদা ক্রমশঃই বাড়ছে।
এ ধরনের ড্যাটা সেন্টারে প্রয়োজন হয় উচ্চক্ষমতার ইলেক্ট্রিক ফ্যান এবং কক্ষগুলো শীতল রাখতে অতিরিক্তি কুলিং ব্যবস্থা। এসব থেকে বিকট শব্দ তৈরি হয়। আর সেখানেই প্রতিবেশিদের আপত্তি।
এছাড়া এমন ড্যাটা সেন্টারে বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। যার জন্য দরকার উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন।
বিলে অবশ্য বলা হয়েছে, কোথায় এমন সেন্টার বসানো যাবে, কোথায় যাবে না সে বিষয়ে সংসদীয় সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে।
গভর্নরের কার্যালয় জানিয়েছে, ২০৪০ সাল পর্যন্ত কোথায় কোন ড্যাটা সেন্টার বসানো যাবে তার সিদ্ধান্ত পরে কোনো এক সময় নেওয়া হবে।
তবে কোম্পানিগুলোর পছন্দ উত্তর ভার্জিনিয়াই। কারণ এখানটাতেই ইন্টারনেটের মূল কাঠামো গড়ে ওঠার ঐতিহাসিক ভিত্তি। আর এখানটা ইন্টারনেটের সংযোগ পয়েন্টগুলোর কাছাকাছি। বিশেষ করে আর্থিক লেনদেন, গেমিং টেকনোলজির জন্য ন্যানো সেকেন্ডই সার্ভার সাপোর্ট প্রয়োজন হয়, আর তা নিশ্চিত করতেই সার্ভারগুলো কাছাকাছি বসানো প্রয়োজন।
প্রিন্স উইলিয়াম কাউন্টির একজন বাসিন্দা বিল রাইট দীর্ঘদিন ধরে বিপুলাকায় এসব ড্যাটা সেন্টারের বিরোধীতা করে আসছিলেন। তার এই দাবির প্রতি সম্প্রতি সমর্থন জানায় কাউন্টির বোর্ড অব সুপারভাইজরস।
গভর্নর কার্যালয়ের নতুন ঘোষণার পর বিল রাইট বলেছেন, এটা এ-ই প্রমাণ করে যে, বড় টেক কোম্পানিগুলো থেকে আসা অর্থ আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনকে কলুসিত করছে।
তিনি বলেন, ড্যাটা সেন্টারে তার নিজেরও আপত্তি নেই। তবে স্টেট সরকার যেনো তা এমন কোনো স্থানে বসানোর অনুমতি দেয় যেখান থেকে পরিবেশগত কোনো আপত্তি উঠবে না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দিকেই এগুলো বসানো উচিত। আর সেখানে মানুষের কাজেরও প্রয়োজন রয়েছে, মত বিল রাইটের।
তবে তার ধারণা, সরকার এসবে কর্ণপাত করবে না। কারণ টেক কোম্পানিগুলো চায় উত্তর ভার্জিনিয়ার কেন্দ্রস্থলেই এমন ড্যাটাসেন্টার বসাতে।
বিল রাইট বলেন, উত্তর ভার্জিনিয়াতো এখন এসবেই ভরে গেছে। আমরা এখানটাকে এখন 'অ্যামজনের কমনওয়েলথ' নামেই ডাকতে পারি।
ভার্জিনিয়া ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশীপ এর মুখপাত্র সুজান ক্লার্ক জানিয়েছেন অ্যামাজন এরই মধ্যে সাইট দেখতে শুরু করেছে। তবে এখনো চূড়ান্ত করেনি।
উত্তরা ভার্জিনিয়া সেই ইন্টারনেট শুরুর দিনগুলো থেকেই টেক-হাব হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে। এখন এখানে যতগুলো ড্যাটা সেন্টারের স্থাপনা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্য বৃহৎ ৫টি কোম্পানি মিলেও এতগুলো স্থাপনা নেই।
এ তথ্য নর্দার্ন ভার্জিনিয়া টেকনোলজি কাউন্সিলের।
এই টেক-কোম্পানিগুলো স্থানীয় সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় অংকের অর্থ-সংস্থানকারি প্রতিষ্ঠান।
লাউডাউন কাউন্টির একটি হিসাব দেখাচ্ছে, এখানকার বার্ষিক বাজেটের ৩০ শতাংশের বেশিই আসে এসব টেক-কোম্পানি থেকে। এই কাউন্টির বাসিন্দা ৪ লাখ।
ড্যাটা সেন্টার বিরোধীতাকারীদের আরেকজন এলেনা স্কোলসবার্গ। প্রিন্স উইলিয়াম কাউন্টির বাসিন্দা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই ইয়াংকিন এসব ড্যাটাসেন্টারের পক্ষ নিলেন। অথচ কমিউনিটিতে ড্যাটা সেন্টার বিরোধী উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।
"তার বোধ কাজ করছে না, তিনি দেখতে পাচ্ছেন না যে কমিউনিটিগুলো আরও বেশি একজোট হচ্ছে এর বিরুদ্ধে," গভর্নর ইয়াংকিনকে নির্দেশ করে বলেন এলেনা।
এদিকে একটি টুইটে ইয়াংকিনের মুখপাত্র ম্যাকাউলে পোর্টার বলেন, ৩৫ বিলিয়ন ডলারের এই বিনিয়োগ ভার্জিনিয়ার ইতিহাসে সবচেয় বড় অংকের একক বিনিয়োগ। এর মধ্য দিয়ে স্টেটে নতুন ১০০০ টি কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
এর আগে ২০১৮ সালে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটন কাউন্টিতে অ্যামাজন যখন তার দ্বিতীয় হেড কোয়ার্টার্স স্থাপন করে সেবার এখানে ২৫ হাজার নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
নতুন চুক্তিতে অ্যামাজনের পক্ষ থেকে যে মেগা ড্যাটা সেন্টার ইনটেনসিভ প্রোগ্রাম নেওয়া হচ্ছে তার আওতায় ১৪০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে কর্মশক্তি উন্নয়ন ও সাইটের সৌন্দর্যবৃদ্ধিতে। স্টেট সরকারের জন্য এটাই বড় প্রণোদনা।
এসবের জন্য সংসদীয় অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
তবে ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টির ডেমোক্র্যাট স্টেট সেনেটর চ্যাপ পিটারসেন রয়েছেন বিরোধী অবস্থানে। এরই মধ্যে তিনি একটি বিল এনেছেন যাতে বলা হয়েছে কোনো প্রাকৃতিক কিংবা ঐতিহাসিক সম্পদের কাছাকাছি ড্যাটা সেন্টার বসানো যাবে না। পিটারসেনের মতে, ভার্জিনিয়া এখন ড্যাটা সেন্টারেই ছেয়ে যাচ্ছে, এর থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।
চ্যাপম্যান বলেন, স্বল্প-মেয়াদি আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে পরিবেশ-প্রতিবেশের দীর্ঘ-মেয়াদী ক্ষতি আমরা হতে দিতে পারিনা।
বাস্তব কর্মীহীন বৃহদাকার এই শিল্পভবনগুলো কোনোভাবেই ভবিষ্যতের অর্থনীতি হতে পারে না। কয়েক দশকের মধ্যেই এগুলো অকেজো হয়ে পড়বে। তবে এরই মধ্যে আমরা আমাদের মূল্যবান কৃষিজমি আর ঐতিহাসিক স্থানগুলো হারিয়ে ফেলবো, বলেন চ্যাপ পিটারসেন।
অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস এর মুখপাত্র অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।