মানব সভ্যতার অন্যতম সেরা আবিস্কার হলো- চাকা। বৃত্তাকার গোলকটি তৈরি হবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও ঠিক হয়ে যায়, গাড়ি আবিস্কারের বিষয়টি। প্রথম গাড়ি থেকে হাল ফ্যাশনের গাড়ি, এই দীর্ঘপথে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে অটোমবিল শিল্পকে। শখের গাড়ি এখন মানুষের অপরিহার্য বাহন।
তাই বলে অটোমবিল শিল্প থেকে শখের বিষয়টি চলে যায়নি। মানুষের শখ পূরণে তৈরি হয় বিলাসবহুল সব গাড়ি। যার দামও আকাশচুম্বী। প্রায় আমাদের মনে প্রশ্ন আসে, বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি কোনটি? প্রশ্নটির সহজ কোন উত্তর নেই। এর সবচেয়ে বড় কারন শখ, শখের শেষ বলে কি কিছু আছে।
কথায় বলে শখের তোলা আশি টাকা। আসলেই তাই। শখের উপর নির্ভর করে বিলাসবহুল গাড়ির দাম। একটু খোলাসা করেই বলা যায়। ধরুন, কোন ধনকুবের শখ হলো তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি তার গ্যারজে রাখতে চান। সেই অনুযায়ী, বিলামবহুল গাড়ি নির্মাতারা তাঁকে সেটি বানিয়েও দিলো।
কিন্তু এরপরই আরেক ধনকুবের শখ হলো সেটিকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার। গাড়ি নির্মাতারা আর বসে থাকবে না। বানিয়ে ফেলবে আগেরটির চেয়েও আরেকটি দামি গাড়ি। এজন্যই বিলাসবহুল গাড়িগুলোকে বলা হয় ধনীদের শখ আর গাড়ি নির্মাতাদের যন্ত্রকৌশলের উচ্চাভিলাষী উদ্ভাবনী শক্তির মিশ্রন।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়িগুলো তৈরিই করা হয় ধনীদের কথা মাথা রেখেই। এসব গাড়ি কখনও শো রুমে রাখা হয় না। কিনতে হলে দিতে হয় আগাম কার্যাদেশ। এরপর অপেক্ষা, ছয় থেকে এক বছর পরেই হাতে পাওয়া যায় গাড়ি। অভিজাত গাড়িগুলো প্রকৌশল শ্রেষ্ঠত্বেকে মূর্ত করে এবং কিছু নির্বাচিত কয়েকজনের জন্য সেগুলো সংরক্ষিত থাকে, তাদের জন্যই যারা স্বচালিত শিল্পকলার একটি অতুলনীয় অভিজ্ঞতা চায়।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়িগুলো তৈরি হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, ব্যতিক্রমী ও আকর্ষনীয় ডিজাইন, আরামদায়ক অভ্যন্তরীণ সজ্জা এবং সর্বোপরি ইঞ্জিনের সক্ষমতাকে সামনে রেখে। এসব কারণে অভিজাত গাড়িগুলোর কোন বিকল্প হয়, বাজারে সবার থেকে আলাদা করে তোলে।
এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গাড়িগুলোর কথা এবার জানা যাক। বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়িটি হলো রোলস রয়েস লা রোজ নোঁরে ড্রপটেইল। এটির দাম ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটির দাম পড়বে তিনশ’ ৬০ কোটি টাকার বেশি। লা রোজ হল দুই-সিটের সুপারকার।
এটির বডি তৈরি হয়েছে কার্বন, ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। রা রোজ ৫ দশমকি ৩ মিটার লম্বা এবং দুই মিটার চওড়া। বিভিন্ন কোণ থেকে দেখলে এর বডির রঙ পরিবর্তন হয়। প্রায় দেড়শ ধরনের পরীক্ষা চালিয়ে এই গাড়ির রঙ বের হয়েছে এবং রঙের মিশ্রনটি গোপন রাখা হয়েছে। এটিকে বলা হচ্ছে কালো গোলাপ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি গাড়ির স্থানটিও দখলে রেখেছে রোলস রয়েস। একই কোম্পানি বোট টেইল মডেলের গাড়িটি ফোর্বস সাময়িকীর বিচারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি গাড়ি। এটির দাম ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় তিনশ কোটি টাকার উপরে। এটিতেও রয়েছে অবিশ্বাস্য সব ফিচার।
রোলস রয়েস সাধারণত ধনীদের জন্যই গাড়ি তৈরি করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন তৈরি করে থাকে। সে যাক, এবার আসা যাক, তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি গাড়ির কথায়। এটি তৈরি করে ফ্রান্সের বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বুগাতি। এই ব্রান্ডের একটি গাড়ি নীতা আম্বানির গাড়ি বহরে রয়েছে।
বুগাতি লা ভার্চু নোয়া হলো এই মুহূর্তে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ দামি গাড়ি। এটির দাম ১৫ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় পড়বে একশ’ ৮০ কোটি টাকার বেশি। এটি একটি অভিজাত স্পোর্টস মডেলের আদলে তৈরি কালো রংয়ের গাড়ি। এটির ডিজাইন যে কারো মাথার ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ির তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাগানি জোন্ডা এইচপি বারসেট্টা মডেলের গাড়ি, এটির দাম বাংলাদেশি টাকায় একশ’ ৭৫ কোটি টাকার বেশি। পঞ্চম স্থানে- এসপি অটোমেটিভ কেওয়স। এটির দাম ১৪৪ কোটি টাকা। ষষ্ঠ স্থানে আবারও রোলস রয়েস সুইপটেইল, দাম ১৩০ কোটি টাকা।
সপ্তম স্থানে থাকা বুগাতি সেন্টোডিসি মডেলটির দাম ৯০ কোটি টাকা। অষ্টম স্থানে থাকা মার্সিডিজের মেবাখ এক্সেলেরো মডেলটির দাম বাংলাদেশি টাকায় ৮০ কোটি টাকা। নবম স্থানে আছে পাগানি হুয়ারা কোডালুঙ্গা ও দশম স্থানে বুগাতি ডিভো মডেল। এই দুটোর দাম যথাক্রম ৭৫ ও ৬০ কোটি টাকা।